স্লিপ অ্যাপনিয়া : বাড়তি ওজনের এক খেসারত

ঘুমের রোগ, শ্বাসের রোগ। বুঝতে হলে জানতে হবে, অ্যাপনিয়া কী? অ্যাপনিয়া হচ্ছে, মুখগহ্বর ও নাকে ১০ সেকেন্ড ধরে কোনো বায়ুপ্রবাহ না থাকা। এহেন ঘটনা যদি সাত ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে ঘটে ৩০ বা তার বেশিবার, তাহলে মানুষটি ভুগছেন স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া: শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশে বারবার কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে থাকলে তা যদি ঘুমকে খণ্ডিত করে দেয়, হূদ্যন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত এবং নিদ্রাকালে অক্সিজেনের ঘাটতি সৃষ্টি করে, তাহলে রোগটির নাম অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।
আক্রান্তের হার: ছেলেদের হয় ৪ শতাংশ, মেয়েদের ২ আর যেকোনো জনগোষ্ঠীতে রোগী পাওয়া যায় ৫ শতাংশ।
কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ:
 ওজন যাদের বেশি।
 বডিমাস ইনডেক্স বা দেহাবয়ব ও ওজনের অনুপাত যাদের ৩০ কেজি প্রতি বর্গমিটার।
 গলায় মেদ, মাংস ও কোমল টিস্যুর আধিক্য।
 মুখগহ্বর, গলা ও জিহ্বায় মেদ যাদের বেশি।
 গলার মাংসপেশির সতেজতা যাদের কম। এসবের সঙ্গে পাওয়া যায় হূদেরাগ ও সংবহনতন্ত্রের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তে উচ্চমাত্রার লিপিড বা চর্বি।
উপসর্গ:
নাক ডাকা, অবসন্নতা, বিষম খাওয়া ও হাঁপানো, দিবাকালীন নিদ্রালুতা, খণ্ডিত নিদ্রা,
 ঘুমিয়েও ক্লান্তি না কাটা, সপ্রতিভতার অভাব, রুক্ষ মেজাজ, বিছানায় প্রস্রাব।
লক্ষণ:
 সেন্ট্রাল ওবেসিটি বা স্ফীতকায় ঘাড়, বুক, পিঠ ও পেট।
 ঘাড়ের পরিধি ৪৩ সেন্টিমিটার বা এর বেশি।
 পিছিয়ে থাকা চোয়াল।
 মাথা ও মুখের গঠনগত অসংগতি।
রোগ নির্ণয়:  ওভারনাইট অক্সিমেট্রি বা সারা রাত ধরে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ।
 বাড়িতে ঘুমের পর্যবেক্ষণ।
 বিশেষায়িত কেন্দ্রে পলিসমনোগ্রাফি।
পলিসমনোগ্রাফি বলতে বোঝায়:
 রাতভর অক্সিজেনের মাত্রা অনুসরণ।
 ইলেকট্রো এনকেফালোগ্রাফি করে ঘুমের স্থাপত্য অনুধাবন।
 ইলেকট্রো অকুলোগ্রাফি বা নিদ্রাকালীন অক্ষিগোলকের গতিবিধি নিরীক্ষণ
 ইলেকট্রো মায়োগ্রাফি বা নিদ্রাকালে মাংসপেশির গতিপ্রকৃতি নিরূপণ।
পরীক্ষাগুলো করার জন্য ঢাকা শহরে দুটি ‘স্লিপ ক্লিনিক’ স্থাপিত হয়েছে।
চিকিৎসা:
 অল্প সমস্যায় করণীয় হলো, ওজন কমানো। নাকের রোগ-বালাই থাকলে তার চিকিৎসা করা।
 সমস্যা তার চেয়ে বেশি হলে আছে ‘সি-প্যাপ’ বা কনটিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার থেরাপি। ঘুমের সময় এ যন্ত্রটি ব্যবহার করলে শ্বাসতন্ত্রের দেয়াল চুপসে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করা যায়।
 পিছিয়ে থাকা চোয়ালকে সামনে আনার জন্য রয়েছে যন্ত্র।
 সার্জারি: ইউভুলো-প্যালাটো-ফ্যারিঙ্গো প্লাস্টি নামের একটি অপারেশন করা যায়। এতে তালুর অংশবিশেষ, আল-জিহ্বা ও টনসিল কেটে বাদ দেওয়া হয়। এর জটিলতাও অনেক। ব্যথা, রক্তক্ষরণ, শ্বাসরোধ, ফুসফুসে পানি জমে যাওয়া, দেহে অক্সিজেনস্বল্পতা, নাক দিয়ে খাদ্য ও পানীয় উঠে আসা, তালুর নড়াচড়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া গলার শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। শুনে নিশ্চয় বলবেন, প্রতিকারই উত্তম প্রতিরোধের চেয়ে! পাশ্চাত্যে নাক ডাকা থেকে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটে থাকে। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং অভব্য রকমের সশব্দ নাক ডাকা, যার উৎস থাকে তালুতে—এসব কারণে অপারেশনের পথ বেছে নেওয়া হয়।

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages