ব্রণের সহজ চিকিৎসা

মুখের ব্রণ নিয়ে সমস্যার অনত্ম নেই। শিশু থেকে মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ পর্যনত্ম ব্রণে আক্রানত্ম হয়ে থাকেন। আর তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের বেশির ভাগের ব্রণ এক প্রকার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মমাফিক যথাযথ প্রোটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়া গেলে ব্রণের কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব। ব্রণের জন্য ব্যয়বহুল লেজার এমসিডি, ইএলএফ ইত্যাদি চিকিৎসার কোনো প্রয়োজনও নেই। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশসমূহে শুধু ওষুধ ও বিভিন্ন টপিক্যাল লোশন-ক্রিম দিয়েই সফলভাবে ব্রণের চিকিৎসা দেয়া হয়। বরং এসব দেশেই ব্রণের লেজার চিকিৎসা একেবারেই নিরুৎসাহিত করা হয়। ব্রণের রয়েছে নানা ধরন ও প্রকারভেদ। যথাযথ কারণ অনুসন্ধান করে ব্রণের সঠিক চিকিৎসা দেয়া গেলে যে কোনো ধরনের ব্রণের চিকিৎসা সম্ভব। আমরা যদি ব্রণকে মাইন্ড, মডারেট ও সিভিয়ার তিনভাবে ভাগ করি তবে মাইল্ড ব্রণ বা একনির ক্ষেত্রে শুধু টপিক্যাল ওষুধই যথেষ্ট। মডারেট ব্রণের জন্য টপিক্যাল ওষুধের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। আর সিভিয়ার বা তীব্র ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাবার ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক লোশন এবং এডাপ্লিন, বেনজাইল পারঅক্সাইড ও রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া সিভিয়ার ব্রণের জন্য ক্ষেত্রবিশেষ ওরাল আইসোটেরিটিনিয়েন দেয়া হয়। পাশাপাশি সব ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে অয়েল কন্ট্রোলের জন্য একনি কন্ট্রোল সোপ বা লোশন ব্যবহার করতে হয়।

মনে রাখতে হবে একনি বা ব্রণ মুখ, বুক, পিঠ ও শরীরের কিছু কিছু স্থানের অয়েল গ্ল্যান্ডের নিঃসরণ বাড়লে একনি দেখা দেয় এবং এর জন্য দায়ী এক ধরনের হরমোন। তাই ব্রণপ্রবণ মুখের জন্য অয়েল কন্ট্রোল জরুরি। শুধু স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন ও চিকিৎসার পরামর্শ মেনে চললেই আমরা অবশ্যই ব্রণমুক্ত ত্বক রাখতে পারি। এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।

দীর্ঘকালীন কফ ও কাশির কারণ
ডা. মির্জা মোহামমদ হিরণ
কফ কাশির সাথে আমরা সবাই অল্প বিসত্মর পরিচিত। কফ-কাশি কোনো নির্দিষ্ট ব্যাধি নয়। বিভিন্ন ধরনের বক্ষ ব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে কফ-কাশি। নানা ধরনের বুকের অসুখ-বিসুখের কারণে রোগীর দেহে কফ-কাশির উপক্রম হয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা মানুষের দেহের একটি জটিল ব্যাধি। কফ-কাশি হওয়ার একটি অন্যতম বক্ষব্যাধি হচ্ছে ফুসফুসে যক্ষ্মা। ফুসফুসে যক্ষ্মার একমাত্র প্রধান উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘকালীন কফ-কাশি। কোনো ব্যক্তির যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকে, তবে চিকিৎসক ওই ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রানত্ম হয়েছেন বলে ধারণা করেন। ফুসফুসের ক্যান্সার ফুসফুসের একটি মারাত্মক ব্যাধি। ফুসফুসের ক্যান্সারকে মরণঘাতকও বলা হয়ে থাকে। ফুসফুসের ক্যান্সার রোগের পূর্ব লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কফ-কাশি। এক্ষেত্রে কফ-কাশির সাথে বুকে ব্যথাও হয়ে থাকে। এ রোগের উপসর্গ হিসেবে কখনো কাশির সাথে রক্ত নির্গত হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক লোক ব্রঙ্কিওটাইসিস নামক রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে। এটি বুকের একটি ব্যাধি। এই রোগটি সাধারণত মধ্য বয়সের পরে মানুষের দেহে প্রকাশ ঘটে। ব্রঙ্কিওটাইসিস হলে প্রচণ্ড কাশির উপক্রম হয় এবং কাশির সাথে হলুদ পাকা কফ নির্গত হয়। এ সমসত্ম রোগীর দীর্ঘকালীন কাশির সাথে মাঝে মাঝে রক্তপাত হয়। হাঁপানি প্রধানত একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ।

শ্বাসকষ্ট হাঁপানির প্রধান লক্ষণ হলেও এর আর একটি প্রধান উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কফ কাশি। ফুসফুসে কখনো কখনো ফোড়া দেখা দেয়। ফুসফুসে ফোড়া যখন দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন রোগীর দেহে কফ-কাশির উপক্রম হয়। এ রোগে আক্রানত্ম রোগীর কাশির সাথে যে কফ নির্গত হয় তা সাধারণত পেকে হলুদ হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রানত্ম রোগীদের মধ্যে কফ-কাশির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এ জাতীয় রোগীদের কফের রং সাদা বা হলুদ হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন কফের রঙ লালচে ধরনের হয়। এছাড়া ফেরেনজাইটস, পোস্ট নেজান ড্রিপ (সাইনোসাইটিস জাতীয় ব্যাধি) ইত্যাদি রোগের লক্ষণ হিসেবেও কফ-কাশির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কফ-কাশি আলাদা বা নির্দিষ্ট কোনো ব্যাধি নয়। কোনো কোনো বক্ষব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে কফ-কাশি। তাই কফ-কাশি প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে, যে সকল রোগের উপসর্গ হিসেবে কফ-কাশির প্রকাশ ঘটে সে সমসত্ম রোগ প্রতিরোধ করা।

মাথা ধরে কেন?
মাথা ধরা বা মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে দেখা গেছে যে মাথার খুলির মধ্যের রক্তনালিগুলো (ধমনী বা শিরা) যদি বেশি প্রসারিত হয় অথবা মসিত্মষেকর আবরণী পর্দাগুলোর মধ্যে যে রক্তনালিগুলো আছে সেগুলোতে যদি কোনো কারণে টান লাগে অথবা কপাল, মুখমণ্ডল, চোখ, ঘাড় ইত্যাদির মাংসপেশিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম হয় বা ওইসব জায়গায় কোনো প্রদাহ হয় তবে মাথা ধরে। মাথা ধরা তাই কোনো অসুখ নয়। এটা একটা লক্ষণ। তাই মাথা ধরা সারানো অর্থাৎ বরাবরের জন্য মাথা ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বেদনা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারে সাময়িকভাবে মাথাব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারি, কিন্তু এতে মাথা ধরার মূল কারণগুলো দূর করা সম্ভব নয়। মাথা ধরা সারার জন্য যেসব ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলো অনেক সময়েই অন্য অনেক ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এসব ওষুধ বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। সাময়িক উপশমের জন্য প্যারাসিটামল বা অ্যাসপিরিন টেবলেট, দুএকটা খাওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।

পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব
ডা. মো. সাইফুল ইসলাম সেলিম
কোনো দম্পতি টানা এক বছর কোনো প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন না করে স্বাভাবিক যৌনমিলনের পরও যদি সন্তান জন্ম দিতে না পারে, তখন তাকে বন্ধ্যা দম্পতি বলা যেতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ১৫ শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যাত্বজনিত কারণে সন্তান জন্ম দিতে পারে না। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য এককভাবে শুধু পুরুষরাই দায়ী, এক-তৃতীয়াংশ এককভাবে শুধু মহিলারাই দায়ী, বাকি এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ ও মহিলা সমানভাবে দায়ী।

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ
সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পর থেকে ধীরে ধীরে পুরুষের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমতে থাকে। ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদকদ্রব্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরিক স্থ্থূলতা কোনো কোনো সময় পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো কারণ জানা না গেলেও বংশগত কারণেও ব্যাখ্যাহীন বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। পুরুষের বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ অণ্ডকোষের বিভিন্ন রোগ এবং বিকৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অণ্ডকোষের রক্তনালি ফুলে ওঠা, যা ‘ভেরিকোসিল’ নামে পরিচিত। এ রোগের কারণে অণ্ডকোষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সুস্থ-সবল স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য অণ্ডকোষের তাপমাত্রা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। যে কারণে বাহ্যিক তাপমাত্রার সাথে সাথে অণ্ডকোষের থলির আকৃতির পরিবর্তন হয়। ভেরিকোসিল একপাশে অথবা উভয় পাশেই হতে পারে।

অন্য কারণ
শুক্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া বা প্রদাহ হওয়া। শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া। বিকৃত ও দুর্বল শুক্রাণু ও শুক্রাণুর গতি কমে যাওয়া। অণ্ডকোষ অণ্ডথলিতে না থেকে পেটের মধ্যে বা অন্য কোনো স্থানে থাকা। অণ্ডকোষের ও প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ। পিটুইটারি গ্রন্থিসহ শরীরের অন্যান্য গ্রন্থির হরমোনের তারতম্য হওয়া। আঘাত বা প্রস্টেট গ্রন্থির অস্ত্রোপচারের কারণে বীর্য মূত্রথলির দিকে যাওয়া। অতি দ্রুত বীর্যস্খলন। বিকৃত পুরুষাঙ্গ বা যথাযথভাবে পুরুষাঙ্গ উত্থিত না হওয়া। এ ক্ষেত্রে স্বামী মিলনে অক্ষম হয়। কিছু ওষুধ যেমন কেমোথেরাপি, সিমিটিডিন, অ্যানাবোলিক স্টেরয়েড, সপাইরেলোলেক্টন, ফেনিটোয়েন, নাইট্রফুরান্টয়েন ইত্যাদি। যৌনরোগ, নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, লিভার ও কিডনি রোগ। অত্যধিক তাপ, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ড্রাগ ও পরিবেশজনিত বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা অণ্ডকোষের শুক্রাণু তৈরির ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া। শুক্রনালি ও অণ্ডকোষে অপারেশন যেমন ভেসেকটমি। অত্যধিক বাইসাইকেল বা ঘোড়ায় চড়া।

শিশুর হাঁপানি এড়াতে সতর্কতা
আমাদের দেশে অনেক শিশু হাঁপানি নামক কষ্টকর রোগে ভোগে। কাজেই ছোট শিশুর হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাকে অ্যালারজেন্ট বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে দূরে রাখতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ঘরের কার্পেট। তা অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিষকার পর্দা, বিছানা এবং পোশাক ব্যবহার করতে হবে। ঘরে কুকুর বিড়াল এ জাতীয় লোমশ কোনো প্রাণী না পোষাই এ ক্ষেত্রে ভালো। এমনকি লোমওয়ালা কোনো খেলনাও শিশুকে কিনে দেয়া উচিত হবে না। এর কারণ হলো এসবে প্রচুর ময়লা জমে থাকলেও টের পাওয়া যায় না এবং এই লোমজাতীয় অংশ বা তন্তু ওই শিশুর জন্য অ্যালার্জির উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। এরপরও দরকার পর্যাপ্ত আলো-বাতাসসমৃদ্ধ ঘর। তবেই না শিশু ঝুঁকিমুক্ত হবে হাঁপানি থেকে।

ত্বকের চিকিৎসায় লেজার সার্জারি
ডা. দিদারুল আহসান
অবাঞ্ছিত লোম ও চুল অপসারণে লেজার
শ্যামলা রঙের ত্বকের জন্য নির্মিত ফ্লুক্স ১০০০ ডাইওড মেশিন বাংলাদেশেও রয়েছে। ত্বকের কোনো ক্ষতি না করেই ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে অবাঞ্ছিত লোম ও চুলকে অঙ্কুরে ধ্বংস করে। অন্যদিকে আধুনিক কুলিং ব্যবস্থা চিকিৎসাকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করে। কিউ সুইচড এনডি ইয়াগ নামক লেজার দুিিট ভিন্ন ধরনের মিশ্রিত রশ্মির সৃষ্টি করে ত্বকের গভীরে অবাঞ্ছিত চুলের ওপর কাজ করে। বাংলাদেশে ইনটেল পালস্‌ লাইট নামের অত্যাধুনিক লেজার মেশিন রয়েছে, যা একই নিয়মে কাজ করে। কিন্তু-সময় অনেক কম লাগে। কারণ এর চিকিৎসা সপষ্ট, সাইজ অনেক বড়। এ ক্ষেত্রে চার সপ্তাহ পরপর চারটি সিটিংয়ের প্রয়োজন হয়। সব পদ্ধতিই ব্যথামুক্ত ও রক্তপাতবিহীন। চুল অপসারণে এটি একটি বিস্ময়কর আবিষকার ও শতভাগ কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।

ব্রণ নির্মূলে লেজার ফোটন রশ্মির ব্যবহার
দশ বছর ধরে ব্রণ চিকিৎসায় ফোটন রশ্মি বিশ্বব্যাপী সফলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে ব্যাকটেরিয়া ব্রণের জন্য দায়ী তা এ রশ্মি শোষণ করে জীবাণুকে ধ্বংস করে। তাই এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন কমে যায়। এ চিকিৎসার সময়কাল ছয় থেকে আট সপ্তাহ এবং সপ্তাহে এক থেকে দুবার করতে হয়। এটি খুব সহজ ও ব্যথামুক্ত একটি পদ্ধতি, তবে রোগীকে ধৈর্যসহকারে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ত্বকের দাগের চিকিৎসায় লেজার
কিউ সুইচড এনডি ইয়াগ দুটি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে কাজ করে এর সমাধান দেয়। ত্বকের কালো ও জন্মদাগ এবং মুখের ত্বকের উপরিভাগের লোম ও রক্তনালির সমস্যায় এ চিকিৎসা খুবই ফলপ্রসূ।

ত্বকের টিউমার অপসারণে লেজার
কার্বন-ডাই-অক্সাইডযুক্ত লেজার ত্বকের টিউমার ও ক্যান্সার, আঁচিল ও বয়সের ভাঁজের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এতে অ্যানেস্থেসিয়ার প্রয়োজন হয় না। ব্যথামুক্ত এ পদ্ধতিতে এক থেকে দুবার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। ত্বকের ঘা ও অপারেশন-পরবর্তী ঘা শুকানোর জন্য লেজার ইনকোহারেন্ট ফোটন রশ্মির সাহায্যে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থায় ডায়াবেটিস, আলসার, ত্বকের প্রদাহ ও অপারেশন-পরবর্তী ঘা শুকানোর জন্য লেজার ব্যবহৃত হয়।

কানের সংক্রমণ রোধে দসত্মা
পিতা-মাতা মাত্রই জানেন মধ্যকর্ণের সংক্রমণ শিশুদের একটি সাধারণ এবং ভীষণ বেদনাদায়ক সমস্যা। চার ভাগের তিন ভাগ শিশুই এ রোগে আক্রানত্ম হয়ে থাকে। গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে এর সমাধান রয়েছে দসত্মার মধ্যে। দসত্মায় রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ দসত্মা দেহের জন্য আবশ্যক। অনেকের ধারণা, দসত্মা অনাক্রম্য পদ্ধতিতে পোক্ত করে এবং সংক্রমণ রোধ করে।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ বক্তব্যের সমর্থনে কোনো জোরালো প্রমাণ খুঁজে পাননি। এ লক্ষ্যে দশটি ট্রায়ালের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। কানের সংক্রমণ প্রতিরোধে শিশুদের সপ্তাহে অনত্মত একদিন দসত্মার সম্পূরক দেয়া হয় এক মাস ধরে। তারা বিশ্বাসযোগ্য কোনো ফলাফল পাননি। শিশুরাও ছলৌষধির তুলনায় কোনো ভালো ফলাফল দেখাতে পারেনি। ঈসধভড়থষপ উথয়থদথঢ়প-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে একটি ক্ষেত্রে। দেখা গেছে, অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুরা দসত্মা গ্রহণের পরে তাদের মধ্যকর্ণের সংক্রমণের ঝুঁকি কমেছে। তবে সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঝুঁকি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। গবেষকরা বলেন যে শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে কানের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এমনিতেই সেরে যায়। যদি না সারে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে আর কোনো সমস্যা থাকে না।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, শিশুদের কানের সংক্রমণ রোধে দসত্মা কোনো উপকারে আসে বলে মনে হয় না।

আপেল যখন মাউথওয়াশ
ডা. ফারজানা চৌধুরী
অনেকক্ষণ মুখে কিছু না দিলে মুখ শুকিয়ে যায়। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো মুখে একটা খারাপ গন্ধ হয়, যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এসব ক্ষেত্রে আপনি একটি আপেল খেয়ে নিতে পারেন। মাউথওয়াশের কাজ হবে। মুখে সজীবতা ফিরে আসবে। অস্বস্তিকর গন্ধও থাকবে না। তা ছাড়া আপেলের পুষ্টি তো পাচ্ছেনই।

ঝাল খাবার শক্তি জোগায়
দূরপাল্লার দৌড়বিদরা দৌড়ানোর ৩০ মিনিট আগে যদি কোনো ঝাল খাবার খান তাহলে বাড়তি শক্তি পান শরীরে। কারণ ঝাল খাবার শরীরে অ্যাড্রেনালিন নামক অতি জরুরি হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এই অ্যাড্রেনালিন শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, জোগায় বাড়তি শক্তি। আর এ তথ্যগুলো জানিয়েছেন কোরিয়ার ইনকন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

গলাব্যথায় ডালিম চিকিৎসা
পুষ্টিকর ফল হিসেবে ডালিমের বেশ নামডাক আছে। অসুখ-বিসুখে পথ্য হিসেবে ডালিমের সমাদর অনেক আগ থেকেই। গলাব্যথা সারাতেও ডালিম দারুণ কার্যকর। গলাব্যথা বা সোর থ্রোট হলে ডালিমের খোসা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি খেলে সোর থ্রোট সারে। ইসরাইলে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়। আসলে ডালিমের খোসায় থাকে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট নামের বিশেষ উপাদান, যা গলার প্রদাহ দূর করতে বেশি কার্যকর। সেই সাথে এই খোসা সিদ্ধ করা পানির ভাপ নিলে সাইনোসাইটিসের উপশম হয়।

রোগমুক্তি ফল সবজিতে
ফলমূল, শাকসবজি আমাদের দেহকোষের সাধারণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা এর জন্য কোষপ্রাচীরের অন্যতম প্রধান উপাদান ‘পেকটিন’কে কৃতিত্ব দিয়েছেন। পেকটিন হলো এক ধরনের জটিল কার্বোহাইড্রেট তন্তু। যদিও পেকটিন বাজারে খাদ্য অনুপূরক হিসেবে বিক্রি হয়। বিজ্ঞানীরা কিন্তু পেকটিনের জন্য বেশি করে টাটকা ফলমূল, শাকসবজি খেতে বলেন। কারণ ফলমূল থেকে আমাদের শরীর সহজে পেকটিন সংগ্রহ করতে পারে। ফলের রস তৈরি শিল্পে ফেলে দেওয়া লেবুজাতীয় ফলের শুকনো খোসা বা আপেল ইত্যাদির ছিবড়ে থেকে পেকটিন বের করে নেওয়া হয়। তবে নানা কারণে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পেকটিনের কর্মক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ক্যান্সার হওয়ার জন্য ৩০ শতাংশ দায়ী করে হয় বাজে খাবারকে। বিকাশশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ২০ শতাংশ অর্থাৎ শুধু বাজে খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের মতো দেশে অনেক মানুষ ক্যান্সারের শিকার হয়। তামাক সেবনের পর বদ খাদ্যাভ্যাসই ক্যান্সারের আরো একটি কারণ যা কিন্তু সহজেই রোধ করা যেতে পারে বেশি বেশি করে ফলমূল শাকসবজি খেয়ে। তবে যাদের পেটের সমস্যা আছে তাদের শাকসবজি, ফলমূল পরিমাণমতো আহার করা উচিত।

- ডা. মোড়ল নজরুল ইসলামমুখের ব্রণ নিয়ে সমস্যার অনত্ম নেই। শিশু থেকে মধ্যবয়সী নারী-পুরুষ পর্যনত্ম ব্রণে আক্রানত্ম হয়ে থাকেন। আর তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের বেশির ভাগের ব্রণ এক প্রকার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মমাফিক যথাযথ প্রোটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেয়া গেলে ব্রণের কার্যকর চিকিৎসা সম্ভব। ব্রণের জন্য ব্যয়বহুল লেজার এমসিডি, ইএলএফ ইত্যাদি চিকিৎসার কোনো প্রয়োজনও নেই। যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশসমূহে শুধু ওষুধ ও বিভিন্ন টপিক্যাল লোশন-ক্রিম দিয়েই সফলভাবে ব্রণের চিকিৎসা দেয়া হয়। বরং এসব দেশেই ব্রণের লেজার চিকিৎসা একেবারেই নিরুৎসাহিত করা হয়। ব্রণের রয়েছে নানা ধরন ও প্রকারভেদ। যথাযথ কারণ অনুসন্ধান করে ব্রণের সঠিক চিকিৎসা দেয়া গেলে যে কোনো ধরনের ব্রণের চিকিৎসা সম্ভব। আমরা যদি ব্রণকে মাইন্ড, মডারেট ও সিভিয়ার তিনভাবে ভাগ করি তবে মাইল্ড ব্রণ বা একনির ক্ষেত্রে শুধু টপিক্যাল ওষুধই যথেষ্ট। মডারেট ব্রণের জন্য টপিক্যাল ওষুধের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। আর সিভিয়ার বা তীব্র ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাবার ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক লোশন এবং এডাপ্লিন, বেনজাইল পারঅক্সাইড ও রেটিনয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া সিভিয়ার ব্রণের জন্য ক্ষেত্রবিশেষ ওরাল আইসোটেরিটিনিয়েন দেয়া হয়। পাশাপাশি সব ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে অয়েল কন্ট্রোলের জন্য একনি কন্ট্রোল সোপ বা লোশন ব্যবহার করতে হয়।

মনে রাখতে হবে একনি বা ব্রণ মুখ, বুক, পিঠ ও শরীরের কিছু কিছু স্থানের অয়েল গ্ল্যান্ডের নিঃসরণ বাড়লে একনি দেখা দেয় এবং এর জন্য দায়ী এক ধরনের হরমোন। তাই ব্রণপ্রবণ মুখের জন্য অয়েল কন্ট্রোল জরুরি। শুধু স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন ও চিকিৎসার পরামর্শ মেনে চললেই আমরা অবশ্যই ব্রণমুক্ত ত্বক রাখতে পারি। এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।

দীর্ঘকালীন কফ ও কাশির কারণ
ডা. মির্জা মোহামমদ হিরণ
কফ কাশির সাথে আমরা সবাই অল্প বিসত্মর পরিচিত। কফ-কাশি কোনো নির্দিষ্ট ব্যাধি নয়। বিভিন্ন ধরনের বক্ষ ব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে কফ-কাশি। নানা ধরনের বুকের অসুখ-বিসুখের কারণে রোগীর দেহে কফ-কাশির উপক্রম হয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা মানুষের দেহের একটি জটিল ব্যাধি। কফ-কাশি হওয়ার একটি অন্যতম বক্ষব্যাধি হচ্ছে ফুসফুসে যক্ষ্মা। ফুসফুসে যক্ষ্মার একমাত্র প্রধান উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘকালীন কফ-কাশি। কোনো ব্যক্তির যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকে, তবে চিকিৎসক ওই ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রানত্ম হয়েছেন বলে ধারণা করেন। ফুসফুসের ক্যান্সার ফুসফুসের একটি মারাত্মক ব্যাধি। ফুসফুসের ক্যান্সারকে মরণঘাতকও বলা হয়ে থাকে। ফুসফুসের ক্যান্সার রোগের পূর্ব লক্ষণ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কফ-কাশি। এক্ষেত্রে কফ-কাশির সাথে বুকে ব্যথাও হয়ে থাকে। এ রোগের উপসর্গ হিসেবে কখনো কাশির সাথে রক্ত নির্গত হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক লোক ব্রঙ্কিওটাইসিস নামক রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে। এটি বুকের একটি ব্যাধি। এই রোগটি সাধারণত মধ্য বয়সের পরে মানুষের দেহে প্রকাশ ঘটে। ব্রঙ্কিওটাইসিস হলে প্রচণ্ড কাশির উপক্রম হয় এবং কাশির সাথে হলুদ পাকা কফ নির্গত হয়। এ সমসত্ম রোগীর দীর্ঘকালীন কাশির সাথে মাঝে মাঝে রক্তপাত হয়। হাঁপানি প্রধানত একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ।

শ্বাসকষ্ট হাঁপানির প্রধান লক্ষণ হলেও এর আর একটি প্রধান উপসর্গ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী কফ কাশি। ফুসফুসে কখনো কখনো ফোড়া দেখা দেয়। ফুসফুসে ফোড়া যখন দীর্ঘস্থায়ী হয় তখন রোগীর দেহে কফ-কাশির উপক্রম হয়। এ রোগে আক্রানত্ম রোগীর কাশির সাথে যে কফ নির্গত হয় তা সাধারণত পেকে হলুদ হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রানত্ম রোগীদের মধ্যে কফ-কাশির লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এ জাতীয় রোগীদের কফের রং সাদা বা হলুদ হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন কফের রঙ লালচে ধরনের হয়। এছাড়া ফেরেনজাইটস, পোস্ট নেজান ড্রিপ (সাইনোসাইটিস জাতীয় ব্যাধি) ইত্যাদি রোগের লক্ষণ হিসেবেও কফ-কাশির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কফ-কাশি আলাদা বা নির্দিষ্ট কোনো ব্যাধি নয়। কোনো কোনো বক্ষব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে কফ-কাশি। তাই কফ-কাশি প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে, যে সকল রোগের উপসর্গ হিসেবে কফ-কাশির প্রকাশ ঘটে সে সমসত্ম রোগ প্রতিরোধ করা।

মাথা ধরে কেন?
মাথা ধরা বা মাথাব্যথার প্রকৃত কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে দেখা গেছে যে মাথার খুলির মধ্যের রক্তনালিগুলো (ধমনী বা শিরা) যদি বেশি প্রসারিত হয় অথবা মসিত্মষেকর আবরণী পর্দাগুলোর মধ্যে যে রক্তনালিগুলো আছে সেগুলোতে যদি কোনো কারণে টান লাগে অথবা কপাল, মুখমণ্ডল, চোখ, ঘাড় ইত্যাদির মাংসপেশিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম হয় বা ওইসব জায়গায় কোনো প্রদাহ হয় তবে মাথা ধরে। মাথা ধরা তাই কোনো অসুখ নয়। এটা একটা লক্ষণ। তাই মাথা ধরা সারানো অর্থাৎ বরাবরের জন্য মাথা ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বেদনা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারে সাময়িকভাবে মাথাব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারি, কিন্তু এতে মাথা ধরার মূল কারণগুলো দূর করা সম্ভব নয়। মাথা ধরা সারার জন্য যেসব ওষুধ পাওয়া যায়, সেগুলো অনেক সময়েই অন্য অনেক ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই এসব ওষুধ বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। সাময়িক উপশমের জন্য প্যারাসিটামল বা অ্যাসপিরিন টেবলেট, দুএকটা খাওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।

পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব
ডা. মো. সাইফুল ইসলাম সেলিম
কোনো দম্পতি টানা এক বছর কোনো প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন না করে স্বাভাবিক যৌনমিলনের পরও যদি সন্তান জন্ম দিতে না পারে, তখন তাকে বন্ধ্যা দম্পতি বলা যেতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ১৫ শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যাত্বজনিত কারণে সন্তান জন্ম দিতে পারে না। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য এককভাবে শুধু পুরুষরাই দায়ী, এক-তৃতীয়াংশ এককভাবে শুধু মহিলারাই দায়ী, বাকি এক-তৃতীয়াংশ পুরুষ ও মহিলা সমানভাবে দায়ী।

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ
সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পর থেকে ধীরে ধীরে পুরুষের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা কমতে থাকে। ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদকদ্রব্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরিক স্থ্থূলতা কোনো কোনো সময় পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোনো কারণ জানা না গেলেও বংশগত কারণেও ব্যাখ্যাহীন বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। পুরুষের বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ অণ্ডকোষের বিভিন্ন রোগ এবং বিকৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অণ্ডকোষের রক্তনালি ফুলে ওঠা, যা ‘ভেরিকোসিল’ নামে পরিচিত। এ রোগের কারণে অণ্ডকোষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সুস্থ-সবল স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য অণ্ডকোষের তাপমাত্রা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। যে কারণে বাহ্যিক তাপমাত্রার সাথে সাথে অণ্ডকোষের থলির আকৃতির পরিবর্তন হয়। ভেরিকোসিল একপাশে অথবা উভয় পাশেই হতে পারে।

অন্য কারণ
শুক্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া বা প্রদাহ হওয়া। শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া। বিকৃত ও দুর্বল শুক্রাণু ও শুক্রাণুর গতি কমে যাওয়া। অণ্ডকোষ অণ্ডথলিতে না থেকে পেটের মধ্যে বা অন্য কোনো স্থানে থাকা। অণ্ডকোষের ও প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ। পিটুইটারি গ্রন্থিসহ শরীরের অন্যান্য গ্রন্থির হরমোনের তারতম্য হওয়া। আঘাত বা প্রস্টেট গ্রন্থির অস্ত্রোপচারের কারণে বীর্য মূত্রথলির দিকে যাওয়া। অতি দ্রুত বীর্যস্খলন। বিকৃত পুরুষাঙ্গ বা যথাযথভাবে পুরুষাঙ্গ উত্থিত না হওয়া। এ ক্ষেত্রে স্বামী মিলনে অক্ষম হয়। কিছু ওষুধ যেমন কেমোথেরাপি, সিমিটিডিন, অ্যানাবোলিক স্টেরয়েড, সপাইরেলোলেক্টন, ফেনিটোয়েন, নাইট্রফুরান্টয়েন ইত্যাদি। যৌনরোগ, নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, লিভার ও কিডনি রোগ। অত্যধিক তাপ, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ড্রাগ ও পরিবেশজনিত বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা অণ্ডকোষের শুক্রাণু তৈরির ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া। শুক্রনালি ও অণ্ডকোষে অপারেশন যেমন ভেসেকটমি। অত্যধিক বাইসাইকেল বা ঘোড়ায় চড়া।

শিশুর হাঁপানি এড়াতে সতর্কতা
আমাদের দেশে অনেক শিশু হাঁপানি নামক কষ্টকর রোগে ভোগে। কাজেই ছোট শিশুর হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাকে অ্যালারজেন্ট বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে দূরে রাখতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো ঘরের কার্পেট। তা অবশ্যই সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিষকার পর্দা, বিছানা এবং পোশাক ব্যবহার করতে হবে। ঘরে কুকুর বিড়াল এ জাতীয় লোমশ কোনো প্রাণী না পোষাই এ ক্ষেত্রে ভালো। এমনকি লোমওয়ালা কোনো খেলনাও শিশুকে কিনে দেয়া উচিত হবে না। এর কারণ হলো এসবে প্রচুর ময়লা জমে থাকলেও টের পাওয়া যায় না এবং এই লোমজাতীয় অংশ বা তন্তু ওই শিশুর জন্য অ্যালার্জির উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। এরপরও দরকার পর্যাপ্ত আলো-বাতাসসমৃদ্ধ ঘর। তবেই না শিশু ঝুঁকিমুক্ত হবে হাঁপানি থেকে।

ত্বকের চিকিৎসায় লেজার সার্জারি
ডা. দিদারুল আহসান
অবাঞ্ছিত লোম ও চুল অপসারণে লেজার
শ্যামলা রঙের ত্বকের জন্য নির্মিত ফ্লুক্স ১০০০ ডাইওড মেশিন বাংলাদেশেও রয়েছে। ত্বকের কোনো ক্ষতি না করেই ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে অবাঞ্ছিত লোম ও চুলকে অঙ্কুরে ধ্বংস করে। অন্যদিকে আধুনিক কুলিং ব্যবস্থা চিকিৎসাকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করে। কিউ সুইচড এনডি ইয়াগ নামক লেজার দুিিট ভিন্ন ধরনের মিশ্রিত রশ্মির সৃষ্টি করে ত্বকের গভীরে অবাঞ্ছিত চুলের ওপর কাজ করে। বাংলাদেশে ইনটেল পালস্‌ লাইট নামের অত্যাধুনিক লেজার মেশিন রয়েছে, যা একই নিয়মে কাজ করে। কিন্তু-সময় অনেক কম লাগে। কারণ এর চিকিৎসা সপষ্ট, সাইজ অনেক বড়। এ ক্ষেত্রে চার সপ্তাহ পরপর চারটি সিটিংয়ের প্রয়োজন হয়। সব পদ্ধতিই ব্যথামুক্ত ও রক্তপাতবিহীন। চুল অপসারণে এটি একটি বিস্ময়কর আবিষকার ও শতভাগ কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি।

ব্রণ নির্মূলে লেজার ফোটন রশ্মির ব্যবহার
দশ বছর ধরে ব্রণ চিকিৎসায় ফোটন রশ্মি বিশ্বব্যাপী সফলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যে ব্যাকটেরিয়া ব্রণের জন্য দায়ী তা এ রশ্মি শোষণ করে জীবাণুকে ধ্বংস করে। তাই এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রয়োজন কমে যায়। এ চিকিৎসার সময়কাল ছয় থেকে আট সপ্তাহ এবং সপ্তাহে এক থেকে দুবার করতে হয়। এটি খুব সহজ ও ব্যথামুক্ত একটি পদ্ধতি, তবে রোগীকে ধৈর্যসহকারে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ত্বকের দাগের চিকিৎসায় লেজার
কিউ সুইচড এনডি ইয়াগ দুটি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে কাজ করে এর সমাধান দেয়। ত্বকের কালো ও জন্মদাগ এবং মুখের ত্বকের উপরিভাগের লোম ও রক্তনালির সমস্যায় এ চিকিৎসা খুবই ফলপ্রসূ।

ত্বকের টিউমার অপসারণে লেজার
কার্বন-ডাই-অক্সাইডযুক্ত লেজার ত্বকের টিউমার ও ক্যান্সার, আঁচিল ও বয়সের ভাঁজের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এতে অ্যানেস্থেসিয়ার প্রয়োজন হয় না। ব্যথামুক্ত এ পদ্ধতিতে এক থেকে দুবার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। ত্বকের ঘা ও অপারেশন-পরবর্তী ঘা শুকানোর জন্য লেজার ইনকোহারেন্ট ফোটন রশ্মির সাহায্যে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থায় ডায়াবেটিস, আলসার, ত্বকের প্রদাহ ও অপারেশন-পরবর্তী ঘা শুকানোর জন্য লেজার ব্যবহৃত হয়।

কানের সংক্রমণ রোধে দসত্মা
পিতা-মাতা মাত্রই জানেন মধ্যকর্ণের সংক্রমণ শিশুদের একটি সাধারণ এবং ভীষণ বেদনাদায়ক সমস্যা। চার ভাগের তিন ভাগ শিশুই এ রোগে আক্রানত্ম হয়ে থাকে। গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে এর সমাধান রয়েছে দসত্মার মধ্যে। দসত্মায় রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ দসত্মা দেহের জন্য আবশ্যক। অনেকের ধারণা, দসত্মা অনাক্রম্য পদ্ধতিতে পোক্ত করে এবং সংক্রমণ রোধ করে।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এ বক্তব্যের সমর্থনে কোনো জোরালো প্রমাণ খুঁজে পাননি। এ লক্ষ্যে দশটি ট্রায়ালের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। কানের সংক্রমণ প্রতিরোধে শিশুদের সপ্তাহে অনত্মত একদিন দসত্মার সম্পূরক দেয়া হয় এক মাস ধরে। তারা বিশ্বাসযোগ্য কোনো ফলাফল পাননি। শিশুরাও ছলৌষধির তুলনায় কোনো ভালো ফলাফল দেখাতে পারেনি। ঈসধভড়থষপ উথয়থদথঢ়প-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে একটি ক্ষেত্রে। দেখা গেছে, অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুরা দসত্মা গ্রহণের পরে তাদের মধ্যকর্ণের সংক্রমণের ঝুঁকি কমেছে। তবে সুস্থ শিশুদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঝুঁকি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। গবেষকরা বলেন যে শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে কানের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এমনিতেই সেরে যায়। যদি না সারে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে আর কোনো সমস্যা থাকে না।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, শিশুদের কানের সংক্রমণ রোধে দসত্মা কোনো উপকারে আসে বলে মনে হয় না।

আপেল যখন মাউথওয়াশ
ডা. ফারজানা চৌধুরী
অনেকক্ষণ মুখে কিছু না দিলে মুখ শুকিয়ে যায়। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো মুখে একটা খারাপ গন্ধ হয়, যা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এসব ক্ষেত্রে আপনি একটি আপেল খেয়ে নিতে পারেন। মাউথওয়াশের কাজ হবে। মুখে সজীবতা ফিরে আসবে। অস্বস্তিকর গন্ধও থাকবে না। তা ছাড়া আপেলের পুষ্টি তো পাচ্ছেনই।

ঝাল খাবার শক্তি জোগায়
দূরপাল্লার দৌড়বিদরা দৌড়ানোর ৩০ মিনিট আগে যদি কোনো ঝাল খাবার খান তাহলে বাড়তি শক্তি পান শরীরে। কারণ ঝাল খাবার শরীরে অ্যাড্রেনালিন নামক অতি জরুরি হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এই অ্যাড্রেনালিন শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, জোগায় বাড়তি শক্তি। আর এ তথ্যগুলো জানিয়েছেন কোরিয়ার ইনকন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

গলাব্যথায় ডালিম চিকিৎসা
পুষ্টিকর ফল হিসেবে ডালিমের বেশ নামডাক আছে। অসুখ-বিসুখে পথ্য হিসেবে ডালিমের সমাদর অনেক আগ থেকেই। গলাব্যথা সারাতেও ডালিম দারুণ কার্যকর। গলাব্যথা বা সোর থ্রোট হলে ডালিমের খোসা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি খেলে সোর থ্রোট সারে। ইসরাইলে এ পদ্ধতিটি জনপ্রিয়। আসলে ডালিমের খোসায় থাকে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট নামের বিশেষ উপাদান, যা গলার প্রদাহ দূর করতে বেশি কার্যকর। সেই সাথে এই খোসা সিদ্ধ করা পানির ভাপ নিলে সাইনোসাইটিসের উপশম হয়।

রোগমুক্তি ফল সবজিতে
ফলমূল, শাকসবজি আমাদের দেহকোষের সাধারণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা এর জন্য কোষপ্রাচীরের অন্যতম প্রধান উপাদান ‘পেকটিন’কে কৃতিত্ব দিয়েছেন। পেকটিন হলো এক ধরনের জটিল কার্বোহাইড্রেট তন্তু। যদিও পেকটিন বাজারে খাদ্য অনুপূরক হিসেবে বিক্রি হয়। বিজ্ঞানীরা কিন্তু পেকটিনের জন্য বেশি করে টাটকা ফলমূল, শাকসবজি খেতে বলেন। কারণ ফলমূল থেকে আমাদের শরীর সহজে পেকটিন সংগ্রহ করতে পারে। ফলের রস তৈরি শিল্পে ফেলে দেওয়া লেবুজাতীয় ফলের শুকনো খোসা বা আপেল ইত্যাদির ছিবড়ে থেকে পেকটিন বের করে নেওয়া হয়। তবে নানা কারণে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পেকটিনের কর্মক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ক্যান্সার হওয়ার জন্য ৩০ শতাংশ দায়ী করে হয় বাজে খাবারকে। বিকাশশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ২০ শতাংশ অর্থাৎ শুধু বাজে খাবার খাওয়ার কারণে আমাদের মতো দেশে অনেক মানুষ ক্যান্সারের শিকার হয়। তামাক সেবনের পর বদ খাদ্যাভ্যাসই ক্যান্সারের আরো একটি কারণ যা কিন্তু সহজেই রোধ করা যেতে পারে বেশি বেশি করে ফলমূল শাকসবজি খেয়ে।

1 comment:

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages