স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

নারীদের যেসব ক্যানসার হয় দেশে দেশে, স্তন ক্যানসার যে প্রথম বা দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে, এমন পরিসংখ্যান রয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। এ জন্য এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির এত উদ্যোগ। অক্টোবর মাসজুড়ে তাই স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা উদ্যাপিত হচ্ছে দেশে দেশে।
ক্যানসার এমন এক রোগ, যার অন্তর্নিহিত কথা হলো, এ রোগে দেহের কোষগুলো বাড়তে থাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কোষগুলো সব অরাজকতা সৃষ্টির নেশায় মেতে ওঠে, যেন সবাই রাজা নিজের রাজত্বে। আর স্তনে যখন এমন কর্ম চলে, মানে ক্যানসারের সূচনা ঘটে, তখন একে আমরা বলি স্তন ক্যানসার। স্তনেরও রয়েছে তিনটি অংশ, গ্রন্থি, নালি ও সংযোজক কলা।
কখনো কখনো তাই স্তনকোষগুলো স্বাভাবিক কোষের অনেক গুণ বেশি দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকা এসব কোষ মিলে বড় একটি পুঞ্জ তৈরি করে। তাকে বলি টিউমার।
অবশ্য কোনো কোনো টিউমার নিরীহ, নির্দোষ, বলা যায় মোটেই ক্যানসার নয়। আবার কোনো কোনো টিউমার সংহারী—এগুলো হলো ক্যানসার। এদের ক্ষমতা আছে স্তনের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার, এমনকি দেহের অন্যত্রও ছড়ায় অবাধ গতিতে। আর এতে কোষের স্বাভাবিক কার্যকলাপ হয় বিঘ্নিত।
কাদের বেশি হয়
সব নারীরই কমবেশি ঝুঁকি রয়েছে স্তন ক্যানসার হওয়ার। পুরুষের স্তন ক্যানসার হয় কদাচিত্। তবে এমন কিছু বিষয় আছে, যে জন্য কোনো কোনো নারীর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বাড়ে। এর মধ্যে বয়স একটি। বয়স বাড়তে থাকলে ঝুঁকিও বাড়ে। নিঃসন্তান নারী বা দেরি করে প্রথম সন্তান নেওয়া; খুব কম বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব দেখা দেওয়া; দেরিতে রজঃনিবৃত্তি হওয়া; ঘনিষ্ঠ স্বজন, যেমন মা, বোন, কন্যা—এদের স্তন ক্যানসার হয়ে থাকলে; জিনগত ত্রুটি, যেমন বিআরসিএ১ বা বিআরসিএ২ জিনে কিছু পরিব্যাপ্তি ঘটলে; স্তন বা বুকে বিকিরণ চিকিত্সা হলে; স্থূল হলে, বিশেষ করে রজঃনিবৃত্তি পর স্থূলতা; দীর্ঘকাল হরমোন-থেরাপি নিলে; গর্ভনিরোধক খাওয়ার বড়ি দীর্ঘদিন সেবন করলে; মদ পান করলে; সক্রিয় জীবন যাপন না করলে।
লক্ষণ আগেভাগেই চিহ্নিত করা সম্ভব
সূচনাকালে এত ছোট গুটির মতো থাকে যে লক্ষণ-উপসর্গ তেমন থাকেই না। যত বাড়ে ততই স্তনের চেহারায় ও অনুভবে আসে পরিবর্তন। যেমন—
 স্তনে নতুন একটি গুটির আবির্ভাব।
 সেই গুটিতে আসে পরিবর্তন।
 স্তনের আকার-আয়তনে আসে পরিবর্তন।
 স্তন ও স্তনবৃন্তে ব্যথা হয়, সে ব্যথা উপশম হয় না।
 স্তনে যত্রতত্র লালবর্ণ হওয়া, ফুলে ওঠা, স্তন খসে পড়া।
 প্রচণ্ড ব্যথা হয় স্তনবৃন্তে এবং বৃন্তটি ভেতর দিকে চুপসে যায়।
 শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় দুধ না বেরিয়ে কষ বর্ণের কোনো তরল নির্গমন।
এ রকম লক্ষণ-উপসর্গের কোনো একটি দেখা দিলে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ক্যানসার না হয়ে অন্য কারণেও এ রকম হতে পারে। তবে চেকআপ করে নেওয়া জরুরি।
প্রতিরোধ করা যায় স্তন ক্যানসার
সম্প্রতি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা দেহের ওজনের দিকে নজর দিয়ে, নিয়মিত ব্যায়াম করে, সন্তানকে বুকের দুধ দিয়ে, মদ পান না করে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনতে পারেন। ক্যানসার ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুসান হিগিনবোথাম বলেন, ৮০০ গবেষণার ২০০৭ সালের পুনর্মূল্যায়ন এবং সেই সঙ্গে আরও ৮১টি নতুন গবেষণা যোগ করে এমন ফলাফল পাওয়া গেছে। হিগিনবোথাম ক্যানসার সৃষ্টিতে পুষ্টি, আহার ও জীবনযাপনের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। যেমন, প্রতিরোধক পদক্ষেপ নারীরা গ্রহণ করতে পারেন। এর মধ্যে হলো শরীরের স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, প্রতিদিন ৩০-৬০ মিনিট শরীরচর্চা করা, মা হলে শিশুসন্তানকে স্তনের দুধ দেওয়া, মদ পান কম করা (না করলে ভালো)।
এতে যে ব্যাপারটা বোঝা গেল, তা হলো প্রতিদিন আমাদের জীবনাচরণে যেসব পরিবর্তন আনা উচিত সেদিকে খেয়াল করে এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করে ক্যানসার থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ভেঙে উঁচু দালানে উঠলে, গাড়িতে না চড়ে হাঁটলে অনেক সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। হিগিনবোথাম আরও বলেন, সাধারণভাবে সব ক্যানসারকেই প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের খাবার এমন হতে পারে, যাতে থাকবে প্রচুর শাকসবজি ও ফল; শিম, বিচি, বরবটি, গোটাশস্য ইত্যাদি। লাল গোশত খুব কম খেতে হবে, না খাওয়া গেলে আরও ভালো। এই জীবনাচরণে অভ্যস্ত হলে সার্বিক স্বাস্থ্যও হবে ভালো। সর্বাঙ্গীণ কুশল কামনা করি।

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages