ত্বকের সমস্যা এবং পরিচর্যা


দেহপট সনে নট সকলি হারায়’ একটি কথা আছে। দেহের আবরণ ত্বক। ত্বকে কুঞ্চন রেখা পড়ন্ত বেলার লক্ষণ। কিন্তু একে আরো কিছুদিন মসৃণ ত্বক রাখার কৌশলও তো আছে। ত্বক সুরক্ষা দেয় শরীরকে, কিন্তু কেবল কি তাই? সুস্থ ত্বক সৌন্দর্যেরও চিহ্ন। প্রতিদিনের পছন্দ, আমরা যা খাই, আমাদের আসা যাওয়া, চলাচল, অনুভব সবই প্রভাব ফেলে ত্বকের উপর।

চাই সন্দুর ত্বক

খাদ্যের দিকে নজর দিন। প্রচুর ভিটামিন সি, খুব কম চর্বি ও শর্করা খাবার বুড়িয়ে গেলেও সুন্দর রাখে ত্বক। এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছ, ফল, সবজি ত্বককে রক্ষা করে। চাই জটিল শর্করা (লালচাল, লাল আটা) এবং স্বাস্থ্যকর আমিষ।

খাদ্যে থাকা চাই ভিটামিন

এন্টিএজিং ক্রিমে থাকতে পারে ভিটামিন সি ও ই। কেবল তা কেন, এসব ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও উচিত। সঙ্গে খণিজ সেলেনিয়াম। ফলে রোদ থেকে ত্বক রক্ষা পাবে। এমনকি ত্বকে ভাঁজ রেখা, বার্ধক্য রেখা দেখা দেবে দেরিতে। কমলালেবু, পেয়ারা, আমলকি, বাতাবিলেবু, লেবু এসব খাওয়া চাই বেশি বেশি।

দৌঁড়ানো বুড়ো হওয়া ত্বক থেকে বাঁচায়

ব্যায়ামের হিতকরী ফল পড়ে সারা শরীরে। অবশ্য দেহের বৃহত্তম অঙ্গ ত্বকেও। ব্যায়াম করলে রক্তচলাচল বাড়ে, ত্বক থেকে দূর হয়ে যায় বিষ বর্জ্য। রক্তচলাচল উন্নত হলে ত্বকের টিসুতে আসে বেশি বেশি আক্সিজেন ও পুষ্টিকনা যা ত্বককে কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে। তাই কুষণ রেখা সহজে পড়েনা। ঘাম নিয়ে ভয় পাওয়ার হেতু নেই, ব্যায়ামে বরং রোমকুপ খুলে যায়। ব্যায়ামের পরপর মুখ ধোয়া উচিত। কপালে আটসাট বন্ধনী পরা উচিত নয়, এতে ঘাম আটকা পড়ে, ত্বকে হয় উত্তেজনা।

চাই ত্বক সৌন্দর্য বিশ্বাম

রাত জেগে দেখুন কয়েক রাত, ত্বকে পড়বে এর চিহ্ন। চোখের নিচে কালি, ফ্যাকাশে ত্বক, ফোলা চোখ। রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম শরীর ও ত্বককে রাখে তুঙ্গে। চিত্ হয়ে ঘুমানো ভালো। একদিন মুখ বালিশে চেপে শুলে ত্বকে ভাঁজ পড়বে।

গর্ভসঞ্চার বদলে দেয় ত্বক

৯০% গর্ভবতী নারীর তলপেটে রেখা দাগ পড়বেই। প্রসবের পর মিলিয়ে যাবার কথা। ময়শ্চারাইজার ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। ভিটামিন এ পিল এবং লেজারেও সুফল পাওয়া যায়। ত্বকের আর একটি সমস্যা হলো ব্রণ, শরীরে বাড়তি হরমোনের জন্য হতে পারে। দিনে দু’বার মুখ ধোয়া, তৈলমুক্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শও প্রয়োজন।

মেলাস্মা এড়াতে

গর্ভের সময় বা গর্ভ নিরোধক পিল ব্যবহারের সময় কোন কোন নারীর মুখে পড়ে গাঢ় রেখা। ত্বক রঞ্জক মেলানিন অতিরিক্ত হলে এমন গাঢ় ছাপ ছাপ দাগ পড়ে মুখে। প্রসবের পর বা পিল ছাড়ার পর মেলাস্মা মিলিয়ে যায়। খররোদ এড়ালে এবং সানক্রিন লোশন ব্যবহার করলে একে এড়ানো যায়। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধও ব্যবহার করা যায়। তবে খর রোদ এড়ানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ত্বকে যেন না পড়ে ক্ষতিকর রশ্মি

রোদের বিশেষ করে খররোদে অনেক সময় থাকলে ত্বকে এর প্রভাব পড়ে, বিরূপ প্রভাব। ব্যবহার করুন ব্রড স্পেকট্রাম সানব্লক। জিংক অক্সাইড, টাইটানিয়াম অক্সাইড বা এভোরেনজোন প্রডাক্ট ব্যবহার করা যায় ডাক্তারের পরামর্শে। মাথায় ছাতা পরা, লম্বা হাত জামা পড়া। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোদ এড়ানো ভালো। কারণ সে সময় রোদ থাকে বেশি।

বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের খেয়াল

বুড়ো হতে থাকলে ত্বকেও আসে পরিবর্তন। ত্বকে বেশি কোলাজেন তৈরি হয় না এবং যে ইলাস্টিন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে তাও দুর্বল হয়ে যায়। ত্বককোষ দ্রুত তৈরি বা হানি কোনটিই হয়না সহজে। বুড়িয়ে যাওয়া ত্বক উজ্জীবিত করতে ঘষে ঘষে মরাত্বক তুলে ফেলুন। শুকিয়ে যায় না এমন সাবান, ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন। রেটিনয়েড বা ভিটামিন সি ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। রোদ থেকে দূরে থাকুন।

ক্যাফিন পান করবেন, নাকি ত্বকে প্রলেপ দেবেন

চা ও কফিতে যে ক্যাফিন তা পানিশূন্য করে ত্বককে। ফলে ত্বক যায় শুকিয়ে। কিন্তু দেখা গেছে ত্বকে চা পাতা বা কফি প্রয়োগ করলে ক্যাফিন রোদ থেকে ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। কিছু ত্বক ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। ইঁদুরের মধ্যে পরীক্ষায় তা দেখা গেছে।

ধূমপান ত্বকের জন্য ভালো নয়

ধূমপান মোটেও ঠিক নয়, ত্বকের জন্য খুব খারাপ। অকালে ত্বকে ভাজ পড়ে, ত্বক যায় শুকিয়ে। ধূমপানে ত্বকে কমে রক্তচলাচল। ভাঙ্গে কোলাজেন। কম কোলাজেন তাই ত্বকে কুঞ্চণ। ঠোটের এই নড়াচড়া, ওঠানামা এসব ত্বকে ভাজ পড়তে সাহায্য করে। সিগারেটের শলাও ঠোটে লাগানো এর চর্চাতো হয়ই। তাই ধূমপান বর্জন ত্বকের জন্য জরুরীও বটে।

ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখুন

প্রতিদিনই ত্বক দূষণের সংস্পর্শে আসে। সিগারেটের ধোঁয়া, মোটর গাড়ির ধূম, ধোয়াশা ত্বক পরিছন্ন রাখা চাই এসব থেকে। ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী একে প্রতিদিন মৃদু সাবান বা ওয়াশ দিয়ে ধোবেন মুখ, মৃতত্বক কোষ সরাতে মুখ ঘষুণ। এরপর প্রয়োগ করুন রেটিনয়েড ক্রিম বা ময়শ্চারাইজার। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তৈলমুক্ত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

শীতে ঘরে বাইরে

হিম শীতল আবহাওয়া ও শীতল বাতাস শুষ্ক ত্বক আনে। একজিমা ও রজাসিয়া থাকলে অবস্থা অবস্থা শোচনীয় করে। কেবল বাইরের শীতল তোই নয়, ঘরের শুষ্কতাপ ত্বকের উপর বিরুপ প্রভাবও ফেলে। ঘরে হিউমিডিফায়ার থাকলে ভালো। প্রচুর জলপান, ময়শ্চারাইজার ব্যবহার। সানস্ক্রিন।

ভ্রমণে ত্বকের খেয়াল

উড়োজাহাজের ভেতরে শুষ্ক ও কট্কটে্ হয়ে যায় ত্বক কম আর্দ্র আবহাওয়ায়। উড়াল ভ্রমনে কফি ও মদ্যপান না করে শুধু পানি পান উত্তম। ভ্রমনের আগে, ভ্রমনের সময় ও পরে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। উড়ালের সময় মেকআপ না করা ভালো। ৩ আউন্স লোশন বরং রাখুন ব্যাগে।

ক্লোজ আপে ভালো দেখাবে

আলো বদলালে মুখের দেখনও বদলাবে। ফ্লুরোসেন্ট লাইটে ত্বকের টোন হলুদ বা লাল দেখাবে, এমনি আলোতে মৃদু হয় রং। টোন হয় কম। আয়না আলো সবই পরিবেশ দেয় দেখন চেহারার জন্য।

undefined undefined undefined

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages