মুখের বিব্রতকর সমস্যা



দুর্গন্ধ বা দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস একটি বিরক্তিকর স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রায়শই আক্রান্ত ব্যক্তি তার এমন অবস্থা সম্পর্কে খুব একটা অবগত থাকেন না। তবে সমস্যাটি আশেপাশে অবস্থানকারীদের। কেননা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় যখন দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস বেরিয়ে আসে তখন গোটা পরিবেশকে অন্যদিক ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য। শুধু পার্শ্বব্যক্তিই যে এর নেতিবাচক প্রভাবে বিরক্ত হন তা কিন্তু নয়।

সংশ্লিষ্ট ভূক্তভোগী ব্যক্তিও নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হন দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস ও এর আনুষঙ্গিক কারণে। তাই কেউ কেউ হরেক ব্র্যান্ডের মাউথওয়াস/ সেপ্র ইত্যাদি ব্যবহার করে বিরক্তিকর অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় খুঁজেন তাতে ফলাফল কতদূর পাওয়া যায়- তা বলতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বসে নেই, একের পর এক চালিয়ে যাচ্ছেন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তেমনি সমপ্রতি পরিচালিত সমীক্ষা শেষে একদল মার্কিন বিজ্ঞানী একটি নতুন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তাদের ভাষায় দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস দূরীকরণে এবং সুগন্ধী শ্বাসের জন্য মিন্ট বা পারফিউম এর চেয়ে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম ম্যাগনোলিয়া ফুল গাছের বাকল বা ছাল। এখন থেকে এই গাছের চারা লাগাতে পারেন আপনারাও। মুখের দুর্গন্ধ বা Bad Breath নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত্ গবেষকরা নানা ধরনের তথ্য সরবরাহ করছেন। এ নিয়ে আছে নানা মতবাদ।মুখের দুর্গন্ধ মুখের বিভিন্ন সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা, এই সমস্যা গুলো মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ও মাড়ির রোগকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে চিহূিত করা যায়। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, এটা প্রধানত: মুখের খাদ্যকনা থেকে বিপাকিয় পদ্ধতির ফলে নির্গত জীবানুসমূহের থেকে এমাইনো এ্যাসিড এর কারণে হয়ে থাকে, এদের মধ্যে প্রধানত: মুখের গন্ধের জন্য দায়ী হচ্ছে ভেলোটাইল সালোফার কম্পাউন্ডস (VSCs) যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S), মিথাইল মারকেপটেন (CH3SH) এবং ডিনিথাইল সালফাইড (CH3SCH3)। তবে এই ধরনের গবেষণায় তিন রকমের রোগীদের মুখের দুর্গন্ধ সনাক্ত করা হয়েছে যেমন (১) সত্যিকারের মুখের দুর্গন্ধযুক্ত রোগী। (২) কৃত্রিম/মেকি মুখের দুর্গন্ধযুক্ত রোগী ও (৩) মুখের দুর্গন্ধ সম্পর্কে আতঙ্কিত /ভীত রোগী। সত্যিকারের মুখের দুর্গন্ধযুক্ত রোগীদের মুখ থেকে গবেষকরা VSC এর মাত্রা সমূহ পরিমাণ করার পর যারা সত্যিকারের মুখের দুর্গন্ধযুক্ত রোগী ছিলেন তাদের নিম্নের চিকিত্সা সমূহ প্রদান করেন
মাড়ির প্রদাহ সমূহের চিকিত্সা
মুখের ও দাঁতের অন্যান্য চিকিত্সা
মুখের যত্নের হাতে কলমে শিক্ষা
মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরামর্শ দান।

সাধারনত:কৃত্রিম মুখের দুর্গন্ধ ও আতঙ্কিত রোগীদের মুখের দুর্গন্ধ এই দুই শ্রেণীর রোগীকে স্বাস্থ্যশিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান দান ছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ ও উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে। যে সমস্ত রোগীদের ভ্রান্ত ধারণা আছে যে তাদের মুখে দুর্গন্ধ আছে এটা তারাই বুঝতে পারে এবং অন্য কোন স্বাস্থ্য শিক্ষা বা পরামর্শ বা আস্বস্থতা তাদেরকে এই বিশ্বাস থেকে সরাতে পারে না বা কার্যকর হয় না তাদেরকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। এটা সত্য যে, মুখের দুর্গন্ধ এমনই একটি লক্ষণ যেটা মানসিক উদ্বেগেরও কারণ ঘটায়। মুখের এই দুর্গন্ধ কেন হয়, তা নিয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা বহুকাল যাবত্ চলে আসছে। সে সব গবেষণা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করা গেছে, সেগুলোর মধ্যেঃ
প্রতিবার খাবার গ্রহণে মুখের ভিতরে খাদ্য আবরণ দাঁতের ফাঁকে, মাড়ির ভিতর জমে থেকে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্টি এবং তা থেকে মাড়ির প্রদাহ (পেরিওডেন্টাল ডিজিজ)
মুখের যে কোনো ধরনের ঘা বা ক্ষত
আঁকাবাঁকা দাঁত থাকার কারণে খাদ্য কণা ও জীবাণুর অবস্থান
দেহে সাধারণ রোগের কারণে মুখের ভিতরে ছত্রাক ও ফাঙ্গাস জাতীয় ঘা (ক্যানডিয়াসিস)
মুখের ক্যান্সার
ডেন্টাল সিষ্ট বা টিউমার
দুর্ঘটনার কারণে ফ্রেকচার ও ক্ষত
অপরিষ্কার জিহবা

তাছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের কারণেও মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে, যেমনঃ
পেপটিক আলসার বা পরিপাকতন্ত্রের রোগ
লিভারের রোগ
গর্ভাবস্থা
কিডনি রোগ
রিউমেটিক বা বাতজনিত রোগ
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র
হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ
গলা বা পাকস্থলীর ক্যান্সার
এইডস রোগ
হূদরোগ
মানসিক রোগ
নাক, কান, গলার রোগ

প্রাথমিক পর্যায়ে মুখের স্থানীয় রোগ গুলোকে চিকিত্সা করানো প্রয়োজন। মুখের স্থানীয়ভাবে কারণগুলো দূর করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় তবে দেহের অন্যান্য সাধারণ রোগের উপস্থিতির পরীক্ষাগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক দ্ব্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। তবে মুখে দুর্গন্ধ হলে ঘরে বসে

আপনি যা করবেন
একটি পরিষ্কার উন্নত মানের দাঁতের ব্রাশ ও পেষ্ট দিয়ে দাঁতের সবগুলো অংশ ভিতরে-বাইরে পরিষ্কার করুন (তিন বেলা খাবারের পর)।
জিহ্বা পরিষ্কারের জন্য জিবছলা ব্যবহার করুন। বাজারে স্টেনলেস ষ্টিল অথবা প্লাষ্টিকের জীবছুলা পাওয়া যায়।
যে কোনো ধরনের মাউথওয়াস (ক্লোরহেক্সিডিন জাতীয়) ২ চামচ মুখে ভিতরে ৩০ সেকেন্ড রেখে ফেলে দিয়ে আবার অল্প গরম লবণ পানিতে কুলিকুচি করুন প্রতিদিন অন্তত দু’বার সকালে ও রাতে আহারের পর।
সবসময় সময়ে মুখের ভিতরে একটি লং বা এলাচির দানা রাখুন।
মূল খাবারের আগে বা পরে প্রতিবার আহারের পর (যা কিছু খাবেন যেমন বিস্কুুট, ফলমূল ব্লাক জাতীয় খাবার) সম্ভব হলে দাঁত ব্রাশ করুন অথবা ভালোভাবে কুলিকুচি করে ফেলুন।
ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য জর্দ্দা, পান ইত্যাদি ত্যাগ করুন, তাতে শুধু যে মুখের দুর্গন্ধ দুর হবে তা নয় মুখের ক্যান্সার ও প্রতিরোধ হবে।

বিশেষভাবে যা করবেন

দাঁত ব্রাশ করলেই শুধু ময়লা বা খাদ্যকনা পরিষ্কার হয় না, কারণ দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে বা মাড়ির ভিতরে ভিতরে অনেক সময় খাদ্যকণা জমা থেকে পচন শুরু হয়। তাই যাদের দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাদ্য জমা হয় বুঝতে হবে তাদের ডেন্টাল ফ্লস (এক ধরনের পিচ্ছিল সূতা) বা ডেন্টাল টুথ পিকস (এক ধরনের জীবাণু মুক্ত শলাকা)-এর সাহায্যে খাদ্য কণা গুলো বের করা প্রয়োজন। এই ডেন্টাল ফ্লস বা সূতো এবং জীবাণু মুক্ত শলাকা ব্যবহার বিধি একজন ডেন্টাল সার্জনের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো। অনেক সময় এ ফাঁক গুলো ডেন্টাল ক্যারিজ বা মাড়ির রোগের কারণেও হতে পারে, তাই কোনো সিদ্ধান্তের আগে ডেন্টাল এক্স-রে করিয়ে নেওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে চিকিত্সার ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।

সবশেষে বলতে চাই দ’বেলা খাবারের পর দাঁত ব্রাশ, বছরে দু’বার দাঁত ও মুখ পরীক্ষা এবং নাক, কান,গলা সহ পেটের স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে মুখের দুর্গন্ধ আপনার কাছেও আসবেনা।

undefined undefined undefined

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages