যত মেদ তত সমস্যা



সম্প্রতি আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মেদ-এর সাথে ক্যান্সার-এর ঝুঁকি অনেক বেশি। অতিরিক্ত মেদ থেকে হতে পারে স্তন, জরায়ু, অন্ত্রনালী, খাদ্যনালী, অগ্ন্যাশয়, কিডনি, গলব্লাড়ার, লিভার, সার্ভিক্স, প্রষ্টেট ও লিম্ফ গ্ল্যান্ডের ক্যান্সার। মেদ বৃদ্ধির সাথে ক্যান্সারের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খোঁজও বের করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। মেদ বিশেষ করে পেটে অতিরিক্ত মেদ যা সাধারণত ‘ভূড়ি’ নামে পরিচিত যদি বেড়ে যায় তাহলে এর সাথে শরীরে বেশ কিছু হরমোন নিংস্বরণের মাত্রাও বেড়ে যায়। যেমন, সেক্স হরমোন, ইনসুলিন ও ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টর-১ প্রভূতি। এই হরমোনগুলোই ক্যান্সার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।

এই অনাকাঙ্খিত ক্যান্সার থেকে, মেদ ভূড়ি থেকে বাঁচাতে হবে, এর জন্য চিন্তা না করে আজই বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। ডায়েটিং, ব্যায়াম, ওষুধ অপারেশন সহ আরও বিভিন্নভাবে মেদ কমানো যেতে পারে। তবে যে পদ্ধতিই গ্রহণ করা হোক না কেন তার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে হবে। কারণ আপনার মেদ ভূড়ির কারণ কি তা আগে খুজে বের করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেকের কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে ভূড়ি বাড়তে পারে আবার কারও বংশগত কারণে হতে পারে। কিংবা এমনও হতে পারে শুধুমাত্র অলস জীবন-যাপন করার জন্যও ভূড়ি বাড়তে পারে। যে কারণেই হোক আগে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে হবে তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

মেদ-ভূড়ি কমানোর জন্য আদর্শ ব্যবস্থা হতে পারে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা ডায়েটিং। ডায়াটিং হল একটি বিজ্ঞানসম্মত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যার মূল কথা হলো প্রতিদিন এমন পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ যাতে শরীর সব ধরণের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবে কিন্তু মেদ বা ওজন বৃদ্ধি হবে না। প্রতিদিন একজনের কতটা ক্যালরী বা খাদ্যগ্রহণ প্রয়োজন তা নির্ভর করে ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা, শারীরিক গঠন, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির ওপর। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরী গ্রহণ করলে এবং বাড়তি ক্যালরী খরচ করে না ফেললে সারা শরীরেই মেদ জমে ওজন বৃদ্ধি ঘটে থাকে। কিন্তু তারপরও তলপেটে মেদ জমার প্রবণতা শরীরে অন্যান্য অংশের থেকে একটু বেশি। তাই খাদ্য নিয়ন্ত্রণের সাথে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের কথাও চলে আসে মেদ ভূড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য। যে পদ্ধতিতেই মেদ ভূড়ি কমাতে যান না কেন তার আগে আপনাকে অবশ্যই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে হবে। কারণ কোনভাবে না হয় আপনি একবার মেদ কমিয়ে ফেললেন। কিন্তু খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ না করলে আবার মেদ বাড়তেই পারে। তাই এখনই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতন হোন। জেনে নিন প্রতিদিন আপনার কতটুকু ক্যালরী দরকার, কোন খাবারগুলো খাদ্য তালিকায় স্থান দিবেন আর কোন খাবারগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিবেন।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন অল্প ভাত, আটার রুটি, ছোট মাছ, মুরগীর মাংস, মৌসুমী ফল ও প্রচুর শাক সবজি, টক দই, চিনি ছাড়া চা ও কফি।
খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন উচ্চ ক্যালরীযুক্ত খাদ্য যেমন- রেড মিট, মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার, চিনি, গুড়, কেক, চকলেট, আইসক্রিম, চিপস, চর্বিযুক্ত বড় মাছ, ঘি, মাখন, তেল, জ্যাম, জেলী, খেজুর, কিসমিস, কোল্ড ড্রিংক্স, আলু ইত্যাদি।

আপনার শরীরের বাড়তি মেদ ঝঁরিয়ে ফেলতে এবং নতুন করে শরীরে মেদ জমতে দিতে না চাইলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত: ৩০ মিনিট ব্যায়ামের ব্যবস্থা রাখুন এবং মেদ ভূড়ি সংক্রান্ত সকল রোগকে বিদায় জানান।

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages