নাকের প্রদাহ



আমরা যে সব রোগে কষ্ট পাই তার মধ্যে নাকের প্রদাহ একটি সাধারণ রোগ। এ রোগে একবারও ভোগেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই খুব মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তবে সময়মত সর্তক হলে বিব্রতকর এই অসুখকে অনায়াসে প্রতিহত করা যেতে পারে। নাকের প্রদাহ ও তার প্রতিকার এবং চিকিৎসা নিয়ে রেডিও তেহরান থেকে প্রচারিত নিয়মিত সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান 'আপনার স্বাস্থ্য' আলোচনা করেছেন সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশের নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা.মাহবুবুর রহমান।

আলোচনার শুরুতেই ডাক্তার মাহবুব নাকের প্রদাহ কারণ কি সে সর্ম্পকে আলোকপাত করেন। তিনি আমাদের বললেন, নাক দুই অংশে বিভক্ত । এর একটি হলো বর্হি নাক বা এক্সটার্নাল নোজ আর অন্যটি হলো নোজাল ক্যাভেটি বা ভেতরের অংশ। নাকের এই বাইরের অংশটি ত্বক দ্বারা আচ্ছাদিত এবং নাকের এই অংশে নানা ধরণের ইনফেকশন বা সংক্রমন হতে পারে। একই ভাবে নাকের ভেতরের অংশেও নানা ধরণের ইনফেকশন ঘটতে পারে। নাকের বাইরের অংশ চামড়া দিয়ে ঢাকা, কাজেই দেহের অন্যান্য স্থানে ত্বকে যে সব সংক্রমণ ঘটতে পারে। অনুরুপ সংক্রমণ নাকের এই বাইরের অংশও ঘটতে পারে। নাকের ভেতরের অংশে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট নানা ধরণের সংক্রমণ ঘটতে পারে। অথবা উভয়ই একত্রে প্রদাহ ঘটাতে পারে। এর্লাজি নাকের প্রদাহের আরেকটি কারণ। এ ছাড়া শারীরিক ও রাসায়নিক ট্রমার কারণেই নাকের প্রদাহ হতে পারে বলে ডা. মাহবুব জানিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই কোনো কোনো নাকের ড্রপ দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হলে তার ফলে নাকে রাসায়নিক ট্রমা হতে পারে। তবে নাকের প্রদাহের সবচেয়ে প্রধান কারণ হলো ভাইরাস। ভাইরাস দিয়ে নাকের প্রদাহের শুরু হয় এবং পরে সেখানে ব্যাকটেরিয়া এসে হামলা করে।

সচরাচর নাকের প্রদাহ সৃষ্টিকারী ভাইরাস গুলো হচ্ছে, রাইনো ভাইরাস,ইনফুলেয়েঞ্জা ভাইরাস, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রভৃতি। ডা. মাহবুব রেডিও তেহরানকে আরো জানিয়েছেন, যার এ ধরণের সংক্রমণ ঘটেছে তার সংস্পর্শে গেলে এ ধরণের সংক্রমণ ঘটতে পারে অর্থাৎ এটি খুব ছোঁয়াচে রোগ। সংক্রমণ ঘটার এক থেকে তিনদিন পরে সাধারণভাবে নাকের পেছনের দিকে খানিকটা জ্বালা হতে পারে। এরপরই হাঁচি এবং একই সাথে খানিকটা কাঁপুনি দেখা দিতে পারে বা শীত শীত লাগতে পারে। এরপর নাকের ঘ্রাণ শক্তিও হ্রাস পেতে পারে। এইসব লক্ষণ দেখা দেয়ার পর পরই নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়া শুরু হবে ও নাক বন্ধ হয়ে যাবে। এ সময়ে জ্বর আসতে পারে। ভাইরাসের হামলার পথ ধরে ব্যাকটেরিয়া নাকে হামলা চালানোর পর নাকের পানির রং বদলে যাবে। অর্থাৎ এগুলো হলুদাভ বা গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। তবে এ জাতীয় নাকের প্রদাহ থেকে মারাত্মক কোনো জটিলতা দেখা না দিলেও এ জাতীয় রোগ বিব্রতকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে সেকেন্ডারী যে সব সংক্রমণ ঘটে তা পরবর্তীতে লিম্ব নোডগুলোকে আক্রমণ করতে পারে। নাকের পেছন দিক থেকে কান পর্যন্ত দুইটি টিউব গেছে, এই দুই টিউব থেকে সংক্রমণ কান পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

নাকের প্রদাহের চিকিৎসার কথা উঠলেই প্রথমে দরকার সর্তকতার- এ কথা জানালেন ডা. মাহবুব। এ জন্য এ জাতীয় কোনো রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। রোগীর হাঁচি কাশির এলাকায় যাওয়া যাবে না। তবে এরপরও যদি কেউ এমন রোগে আক্রান্ত হয় তবে প্রথমেই তাকে বিছানায় বিশ্রাম নিতে হবে। এ ধরণের বিশ্রাম নেয়াটাই সবচেয়ে ভাল সুফল বয়ে আনে। এরপর রোগীকে প্যারাসিটামল জাতীয় বেদনানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীর আরামের কথা বিবেচনা করে তাকে এন্টি হিসটামিন ও নাকের ড্রপও দিয়ে থাকেন। গরম পানির বাষ্প যদি এ সময় গ্রহণ করা হয় তবে রোগী আরাম পাবে বলে ডা.মাহবুব জানিয়েছেন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসক এন্টিবায়োটিকও দিতে পারেন বলে তিনি জানিয়েছেন। ভাইরাসের উপর এন্টিবায়োটিক কাজ করে না বলে ব্যাকটেরিয়া নাকে আক্রমণ চালালেই কেবল এন্টি বায়োটিক প্রদান করা হয়। ডা. মাহবুবুর রহমান তার সাক্ষাৎকারে শেষের দিকে সবার উদ্দেশে জোর দিয়ে বলেছেন, সর্তকতাই এ জাতীয় রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায়।

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages