মেছতা ব্রণের ক্ষত : লেজার কার্যকর নয়



প্রখ্যাত চর্মরোগ ও লেজার বিশেষজ্ঞ সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা:সিএল গোহ-এর অভিমত:মেছতার কোন স্থায়ী চিকিত্সা নেই এবং কোন ধরণের লেজার মেছতার চিকিত্সায় সম্পূর্ণ কার্যকর নয়। মেছতা চিকিত্সায় সাময়িক উন্নতি হলেও স্থায়ীভাবে এখনও পর্যন্ত কোন চিকিত্সা বের হয়নি। ফ্রাকশনাল সিওটুসহ কোন লেজারে মুখের ব্রণের ক্ষত পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়।



বিশ্ববিদ্যালয় পড়া একটি মেয়ের মুখে মেছতার দাগ। গত দু’বছর ধরে মুখে এই দাগ বেশ গাঢ় হয়েছে। আমি চিকিত্সা করছি মাত্র তিনমাস হবে। আমি সাধারণত: মেছতার দাগে লেজার করিনা এবং রোগীদের মেছতার দাগে লেজার করা উচিত নয় এটা বুঝানোর চেষ্টা করি। কারণ মেছতার দাগে লেজার করা আর বুড়িগঙ্গায় কষ্টার্জিত টাকা ঢেলে দেয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য দেখিনা। আমি সব সময় বলে আসছি মেছতার কোন স্থায়ী চিকিত্সা নেই। সুতরাং বেশী টাকা খরচ করে লেজার করার প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই।

গত বছর ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ডার্মাটোলজির ওপর ৭ম এশিয়ান কনফারেন্স। বাংলাদেশের খ্যাতিমান চর্মরোগ বিশেষজ্ঞগণ এই সম্মেলনে যোগদান করেন। তম্মধ্যে ছিলেন, অধ্যাপক একিউএম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক আগা মাসুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এমইউ কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক এম এ ওয়াদুদ, অধ্যাপক মুজিবুল হক, অধ্যাপক কাজী এ করিম, অধ্যাপক এএসএম জাকারিয়া স্বপন, অধ্যাপক মো: সিরাজুল হক, অধ্যাপক এহসানুল কবীর জগলুল, অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা: মো: নূরুল আমিন, অধ্যাপক রেজা বিন জায়েদ, অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম, অধ্যাপক শাহ আতাউর রহমান, অধ্যাপক জিনাত মেরাজ স্বপ্না, ডা: দীপক কুমার দাস সহ তিন শতাধিক দেশী-বিদেশী নবীন-প্রবীন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। অংশ নেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল স্কিন সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সিএল গোহ ও অধ্যাপক গিয়াম ইয়ক সিন, পাকিস্তানের অধ্যাপক সৈয়দ আতিফ হাসনাইন কাজমী, ভারতের অধ্যাপক গুরমোহন সিং এর মত বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞগণ।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অধ্যাপক সিএল গোহ লেজার সম্পর্কে তার অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ উপস্থাপনায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন মেছতার কোন স্থায়ী চিকিত্সা নেই এবং কোন ধরণের লেজার মেছতার চিকিত্সায় সম্পূর্ণ কার্যকর নয়। মেছতার চিকিত্সায় সাময়িক উন্নতি হলেও স্থায়ীভাবে এখনও পর্যন্ত মেছতার কোন চিকিত্সা বের হয়নি। ওষুধ এবং লেজার মেছতার দাগ সাময়িকভাবে কমিয়ে রাখতে পারে। দ্বিতীয়ত: আর একটি বিষয়ে অধ্যাপক সিএল গোহ বিশেষজ্ঞদের মনে করিয়ে দেন ফ্রাকশনাল সিওটুসহ কোন লেজারে মুখে ব্রণের গর্ত, চিকেন পক্সের গর্ত পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে আধুনিক লেজার দিয়েও শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগের বেশী ব্রণের গর্ত দুর করা সম্ভব নয়। তিনি এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

সিঙ্গাপুরের মত একটি উন্নত দেশে মেছতা ও ব্রণের ক্ষতের চিকিত্সা যেখানে সম্ভব হচ্ছেনা তখন বাংলাদেশের লেজার সেন্টারে কি করে মেছতার চিকিত্সা ও ব্রণের গর্ত চিকিত্সার দাবী করা হয় তার বিচারের ভার পাঠকদের কাছে ছেড়ে দিলাম। আপনারা প্রতারিত ও অপচিকিত্সার শিকার হচ্ছেন কিনা তা অবশ্যই ভেবে দেখবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিঙ্গাপুর, আমেরিকা ও ইউরোপে ডার্মাটোলজি, কসমেটিক ডার্মাটোলজি, লেজার ও কসমেটিক সার্জারীর ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেয়া সত্বেও অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই আমি নিজে কখনও মেছতার দাগ নিরাময় করতে পারি অথবা ব্রণের গর্ত মুছে দিতে পারি এমন দাবী করিনা। বরং আমি দীর্ঘদিন ধরে লেখনীর মাধ্যমে রোগীদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। কোন রোগীকে মিথ্যা তথ্যদিয়ে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা কখনই করিনা। বরং সত্য তথ্য দেয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোগী হারাতে হয়। যাহোক, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই রোগীটির কথায় ফিরে আসি। তার সমস্যা বাজারে যত্রতত্র বিক্রিত ফেয়ারনেস ক্রিম লাগানোর পর তার মেছতার দাগের ওপর এক ধরণের কালোদাগ স্থায়ীভাবে বসে গেছে। যাকে বলা হয় পিআইএইচপি বা পোস্ট ইনফ্লামেটরী হাইপার পিগমেন্টেশন।

বাজারে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে বিক্রিত নানা ধরণের অ্যারোমা, হারবাল ও ফেরারনেস ক্রিম ব্যবহারের পর প্রতিদিন স্কিন বিশেষজ্ঞদের চেম্বারে মুখে দাগবসে যাওয়া বা মুখ পুড়ে যাওয়া রোগীরা আসছে। এসব রোগীদের নিয়ে আর একদিন বিস্তারিত যাহোক, আমার চেম্বারে আসা পোষ্ট ইনফ্লামেটরী হাইপার পিগমেন্টেশন নিয়ে আগত রোগীটি মেছতার চিকিত্সায় বাজারে পাওয়া ক্রিম লাগানোর পর মুখের এই অবস্থা। আমি গত তিন মাস ধরে কিছু ডিপিগমেন্টিং ক্রিম ব্যবহার এবং অন্য একটি হালকা ট্রিটমেন্ট করে আশানুরূপ ফল পাচ্ছিনা। ফলে রোগীটি ক্ষুদ্ধ হয়ে আরও দু’টো লেজার সেন্টারের শরনাপন্ন হন। দু’টি সেন্টারের পক্ষ থেকেই বলা হয় তারা লেজারের মাধ্যমে মুখের দাগ তুলে দিতে পারবেন। কিন্তু রোগীটি তাদের কথায় আশ্বস্ত হতে না পেরে পুনরায় আমার কাছে এসেছে। যা হোক, আমি হয়ত লেজার চিকিত্সায় নগণ্য অবস্থানে রয়েছি, সে কারণে হয়ত বা বোধগম্য হয়না পোস্ট ইনফ্লামেটরী হাইপার পিগমেন্টেশন কিভাবে লেজার দিয়ে সারানো যায়। থাক এসব কথা। মুখে দাগ, ব্রণের ক্ষত, গর্ত রয়েছে এমন যেসব রোগীরা এক লেজার সেন্টার থেকে অন্য লেজার সেন্টারে ছুটছেন তাদের অনুরোধ করবো লেজার বা কসমেটিক ট্রিটমেন্ট বা অ্যারোমা, হারবাল ট্রিটমেন্ট করার পূর্বে অবশ্যই ভালো করে জেনে নেবেন কি চিকিত্সা করছেন এবং আসলেই কি এই ধরণের চিকিত্সায় মুখের মেছতা বা ব্রণের গর্তের কোন নিরাময় হবে কিনা। না জেনে, না বুঝে লেজারের নামে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয়ের কোন মানেই হয়না। আমার এ লেখায় হয়ত অনেকে আহত হতে পারেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সত্, সরলপ্রাণ রোগীরা যাতে প্রতারিত না হয় তা অবশ্যই দেখা একজন চিকিত্সক ও লেখকের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।

undefined undefined undefined

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages