মেয়েলী রোগ লিউকোরিয়া
|লিউকোরিয়াকে বাংলায় শ্বেতপ্রদর বলে অভিহিত করা হয়। মাসিক হওয়ার রাস্তা দিয়ে যে সাদা স্রাব নিঃস্বরণ হয় তাই শ্বেতপ্রদর। আসলে এটা কোনো রোগ নয়, উপসর্গ মাত্র। মেয়েদের জীবনে কোনো না কোনো সময় এই লিউকোরিয়া সমস্যা হতে পারে। রস শ্লেষ্মা অথবা পুঁজযুক্ত সাদা স্রাব নিঃস্বরণ হয় বলেই এটাকে লিউকোরিয়া বলা হয়। মহিলাদের এটা মূলত স্বাভাবিক অবস্থা, কোনো রোগ নয়।
লিউকোরিয়ার কারণ দুটি:
ফিজিওলজিক্যাল বা সহজাত শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন;
প্যাথলজিক্যাল বা রোগজনিত কারণ।
ফিজিওলজিক্যাল লিউকোরিয়া যেসব ক্ষেত্রে হতে পারে তা হচ্ছে:
জন্মগ্রহণের পর মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে আড়াই মাস বয়সী শিশুর
যৌবনকালে হরমোনের কারণে
ডিম্বাশয় হতে ডিম্বাণু নিঃস্বরণের সময়
প্যাথলজিক্যাল বা যেসব রোগের কারণে লিউকোরিয়া সমস্যা হতে পারে সেগুলো হলো, রুগ্ন স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, অসুখী দাম্পত্যজীবন এবং সেই সঙ্গে কিছু মানসিক অসুস্থতা। এছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্ব্বন; যেমন খাওয়ার বড়ি, কপারটি, রিং পেসাজ ইত্যাদি। অন্যদিকে এন্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহারেও লিউকোরিয়া হতে পারে।
যেসব কারণ বা অবস্থায় এই সমস্যা হতে পারে সেগুলো হলো, রক্তশুণ্যতা, দীর্ঘকালীন কিডনি রোগ, যক্ষ্মা, পেটের অসুখ, ডিম্ব্বাশয়ের নিঃস্বরণ অভাব ইত্যাদি। ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রণ ইত্যাদির অভাবের কারণেও সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া হতে পারে।
জীবাণুঘটিত লিউকোরিয়া এবং তার লক্ষণ:
খুবই কমন যেসব জীবাণু দ্বারা লিউকোরিয়া হয় সেগুলোর মধ্যে ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনালিস ক্যানডিডা এলবিকানস, গনোরিয়ার জীবাণু নাইসেরিয়া গনোরি গাডিনিরিলা ভ্যালাইনালিস অন্যতম। এসব জীবাণু দ্বারা লিউকোরিয়া হলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো, প্রচুর যোনি স্রাব সাদা বা অন্যান্য রংয়ের নিঃস্বরণ, স্রাবের বিশ্রী গন্ধ, অনেক সময় মাছের আশটে গন্ধের মতো সঙ্গে চুলকানি থাকতে পারে। সেই সঙ্গে তলপেট, পিঠ ও মাজায় ব্যথা থাকতে পারে।
ট্রাইকোমোনাস জীবাণু দ্বারা সংঘটিত লিউকোরিয়ার লক্ষণ:
এই সমস্যা যুবতী বয়সে যারা গর্ভকালীন ও মেনোপজের সময় হয়ে থাকে। এই রোগের সুপ্তিকাল বার থেকে আঠাশ দিন। যোনিপথে হলুদাভ স্রাব ও প্রচুর সবুজাভ ক্ষরণ এবং কখনো বেশি পরিমাণ সাদা বা ক্রিম রঙের হতে পারে।
ক্যানডিডা জীবাণু দ্বারা সংঘটিত লিউকোরিয়ায় সামান্য চুলকানি অথবা প্রচণ্ড চুলকানি থাকে। সাদা দইয়ের মতো ছাকড়া ছাকড়া স্রাব দেখা দেয়। মাসিকের সময় গর্ভাবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এবং এন্টিবায়োটিক সেবনের সময় লিউকোরিয়া বেড়ে যেতে পারে।
গনোরিয়া জীবাণুঘটিত লিউকোরিয়া:
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াসহ বার বার প্রস্রাবের বেগ হয়
ক্ষণ বা স্রাব বেশি হয়ে জরায়ু গ্রীবা ও বার্থোলিন গ্রন্থির প্রদাহ দেখা দেয়। ফেলোপিয়ন টিউবে প্রদাহ হয়ে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
চিকিত্সা:
প্রথমেই রোগীর অন্য কোনো শারীরিক ও মানসিক রোগ আছে কিনা তা নির্ণয় করে চিকিত্সা দিতে হবে। এমন কি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলেও তার চিকিত্সা করাতে হবে এবং পরে স্রাবের ওষুধ দিতে হবে। রোগীকে আশ্বস্থ করতে হবে।
0 comments:
Post a Comment