মহিলাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া


প্রস্রাবে প্রদাহ যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির পর থেকে বৃদ্ধ বয়সের যেকোনো সময়। মূল উৎস হচ্ছে অপরিচ্ছন্নতা, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, পায়ুনালী, ঘন ঘন কৃমি কর্তৃক সংক্রমণ, সহবাসের কারণে মূত্রনালীতে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। পায়ুনালী থেকেই, কোলাই নামক জীবাণু কর্তৃক শতকরা ৭০-৮০ ভাগ প্রস্রাবের প্রদাহ হয়ে থাকে। অন্যান্য জীবাণুর মধ্যে প্রোটিয়াস, ক্লেবসিনা ও সিওডোমনাসের নাম উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি স্টেফাইলোক্কাস স্কোরোফাইটিকাস নামক জীবাণু মেয়েদের ১৫ থেকে ৩০ ভাগ প্রস্রাবের কারণ।

জীবণু প্রস্রাবের পথে প্রবেশের পর মূত্রনালী দিয়ে ক্রমেই কিডনি পর্যন্ত যেতে পারে। প্রস্রাবের প্রদাহের প্রথম শর্ত হচ্ছে জীবাণু প্রস্রাবের রাস্তায় জমা হতে হবে। তবে যেকোনো কারণে প্রস্রাবের রাস্তায় জীবাণু জমতে পারে। জীবাণু সেখানে থেকে মূত্রথলিতে প্রবেশ করার পর প্রস্রাবের প্রদাহ হবে কি না তা নির্ভর করছে অনকে কারণের ওপর। এর মধ্যে মূত্রথলির প্রতিরোধ শক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূত্রথলির ভেতরের দেয়ালে ইমিউনো গ্লোবিউলিন নামক একটি স্তর রয়েছে, যে জন্য জীবাণু মূত্রথলির কোষের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না।

প্রস্রাব এমনিতেই অ্যাসিডিক, এ অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকলে জীবাণু বাড়তে পারে না। শুধু তা-ই নয়, পরিমিত পানি খেলে প্রতিবার প্রস্রাবের মাধ্যমে মূত্রথলির ভেতর থেকে জীবাণু বের হয়ে যায়।
মূত্রথলির প্রদাহের উপসর্গ হচ্ছে, বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা অনুভূত হওয়া, মাঝে মধ্যে তলপেটে ব্যথা হওয়া, কখনো কখনো পরিমাণে কমে গিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব হওয়া। এ অবস্থা সৃষ্টি হলে প্রস্রাবের রঙ ধোয়াটে ও দুর্গদ্ধযুক্ত হতে পারে। তবে একটি ব্যাপার খুবই লক্ষণীয়, তা হলো প্রস্রাব করে আসার পরপরই আবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা।

এই প্রদাহ ক্রমেই কিডনিকেও আক্রান্ত করতে পারে। এ অবস্থায় নাভীর দু’দিক থেকে পেছন পর্যন্ত ব্যথা ছড়াতে পারে। কেঁপে কেঁপে জ্বর আসতে পারে। প্রস্রাবের রঙ রক্ত বর্ণও হতে পারে। খওয়ায় অরুচি, মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, সমস্ত শরীর ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। বাসর রাতের পর অথবা তারও দু-এক সপ্তাহ পর নববিবাহিত মেয়েরা মূত্রথলির প্রদাহে আক্রান্ত হতে পারে, একে হানিমুন সিসটাইটস বলে। অবশ্য প্রস্রাবের প্রদাহ ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি হয়। তবে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মহিলা বিশেষ করে যৌন সক্রিয় বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হয়। এর কারণ হচ্ছে মহিলাদের মলত্যাগের রাস্তা ও প্রস্রাবের রাস্তার মধ্যে দূরত্ব অনেক কম। কাজেই জীবাণু পায়ুনালীর রাস্তা থেকে প্রস্রাবের পথে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
রোগের বিস্তারিত ইতিহাস, লক্ষণ, উপসর্গ ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা, কালচার করে জীবাণু নির্ণয় করা হয়। এ কালচার করার দু’টি দিক আছে, একটি জীবাণু বিঘ্নিতকরণ ও অপরটি এই বিঘ্নিত জীবাণুটির বিরুদ্ধে সঠিক ওষুধ বাছাই করা। এমন অনকে মহিলা আছে, যাদের প্রায়ই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার উপসর্গ থাকে এবং তাদের প্রস্রাব পরীক্ষা করলে শুধু শ্বেতকণিকা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রস্রাব কালচার করলে কোনো জীবাণু পাওয়া যায় না, আর যদি জীবাণু পাওয়াও যায় তার পরিমাণ খুবই কম থাকে। মহিলাদের এ অসুবিধাকে ইউরেথ্রাল সিনড্রোম বলা হয়। বর্তমানে এ ইউরেথ্রাল সিনড্রোম সম্বন্ধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেখা গেছে এর শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে সত্যিকারের কোনো প্রদাহ থাকে না।

0 comments:

Post a Comment

Blog Archive

Recent Posts

Categories

Unordered List

Sample Text

Pages